আমার কাছে পরিপূর্ণতার মূল্য সবসময়ই অস্বাভাবিকরকম চড়া ছিল এবং আমি ভুল করাকে শেখার প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবেই মেনে নিয়েছি। আমি সাহসের তুলনায় দ্রুততা এবং পরিপূর্ণতার তুলনায় টিকে থাকাকে বেশি মূল্যায়ন করি।
প্রয়াত এ.পি.যে. আবুল কালাম, বিজ্ঞানী এবং ভারতের সাবেক রাষ্ট্রপতি (উইকিউক্তিতে এ.পি.জে. আবুল কালাম)
আপনি জানেন কি? শুধু দক্ষিণ এশীয় অঞ্চলেই ৮ টি দেশ অবস্থিত, পৃথিবীর ২৫% জনগোষ্ঠীর এবং ১.৯ বিলিয়ন মানুষের বাস, যা একে একইসাথে পুরো পৃথিবীর এবং উইকিমিডিয়া আন্দোলনের সবথেকে জনবহুল এলাকাগুলোর একটিতে পরিণত করেছে।
কারিগরি অবদানকারী, উইকিসংকলনের মাধ্যমে সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য সংরক্ষণ এবং প্রচুর স্থানীয় ভাষার উইকি মিলে বেশ প্রাণবন্ত কিছু সম্প্রদায় এখানে রয়েছে। কোভিড-১৯ এই অঞ্চলের আন্দোলনে ব্যাপক প্রভাব রাখলেও আসন্ন সম্মেলন ও যৌথ উদ্যোগসমূহের মাধ্যমে বৈশ্বিক মহামারীপূর্ব কার্যক্রম চলমান রাখার ও কিছু ক্ষেত্রে নতুন করে শুরু করার লক্ষ্যে বর্তমানে কাজ চলছে।
এই পোস্টে আমরা আঞ্চলিক প্রবণতা সম্পর্কে গভীরতর ধারণার্জন এবং আঞ্চলিক চাহিদার প্রতি দ্রুত সাড়া ও সহায়তা প্রদানের লক্ষ্যে উইকিমিডিয়া ফাউন্ডেশনে নতুন পদক্ষেপের অংশ হিসেবে দক্ষিণ এশীয় অঞ্চলের গহীনতর অংশে ঝাঁপ দেব। এটি আমাদের চলমান বার্ষিক পরিকল্পনার অংশ, যেখানে এবছরের মনোযোগের অন্যতম কেন্দ্র হলো জোরালো আঞ্চলিক ফোকাসের মাধ্যমে জ্ঞানের সমতার পথে অগ্রসর হওয়া। আমাদের আঞ্চলিক ফোকাসের অংশ হিসেবে ফাউন্ডেশনের বিভিন্ন দল, পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলে একত্রে আমরা কী ধরণের প্রভাব রেখে যেতে পারি, তা নির্ধারণ করার লক্ষ্যে স্থানীয় সম্প্রদায়সমূহের সাথে আরো পরিকল্পিতভাবে যুক্ত হচ্ছে ও সমন্বয় করছে। প্রতি তিনমাস পরপর আমরা স্বাধীন স্বেচ্ছাসেবী, চ্যাপ্টার, ব্যবহারকারী দল, থিমেটিক সংগঠন এবং উন্মুক্ত জ্ঞানের জগতের অংশীদার সংগঠনগুলোর স্থানীয় ও ঐতিহাসিক প্রবণতা ও কার্যক্রম নিয়ে আলোচনার জন্য একত্রিত হবো।
দক্ষিণ এশিয়ায় ডিজিটাল প্রবণতা
সারা পৃথিবীতেই অসম্ভব দ্রুততার সাথে যোগাযোগ, ডিজিটাল সাক্ষরতা ও ডিজিটাল দক্ষতা বেড়ে চলেছে এবং দক্ষিণ এশীয় দেশগুলো ইতোমধ্যেই মোবাইল নেটওয়ার্কের বিস্তৃতি ও ইন্টারনেটের ক্রমবর্ধমান ব্যবহারের ফলে তৈরি হওয়া ডিজিটালকরণের ফলাফল পেতে শুরু করেছে। এই প্রবণতা দক্ষিণ এশীয় অঞ্চলে মুক্ত জ্ঞান আন্দোলনে অংশ নেবার ও বিকাশিত হবার অধিকতর সুযোগ ও সম্ভাবনাকেই নির্দেশ করে।
এই অঞ্চলে প্রতি ১০০ জনে ৮৬ জন মোবাইল ফোন ব্যবহারকারী আছেন, যদিও তা দেশভেদে ভিন্ন। আফগানিস্তানে শতকরা ৫৮ জন এবং মালদ্বীপে সেই সংখ্যা ১৩৩! দক্ষিণ এশীয় জনসংখ্যার ৬৬% এর বয়সই ১৫ থেকে ৬৬ বছরের ভেতর, যার অর্থ হলো দক্ষিণ এশীয় ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের অধিকাংশই তরুণ ও মধ্যবয়সী, তাঁরা ইন্টারনেটে কনটেন্টের সন্ধানে থাকেন এবং একইসাথে বেশ প্রযুক্তিবান্ধব।
দক্ষিণ এশিয়ায় উইকিমিডিয়া
২০২২ সালের উইকিমিডিয়া প্রকল্পসমূহের বৈশ্বিক পাতা পরিদর্শনের পরিসংখ্যানের ৬.৫% দক্ষিণ এশিয়া থেকে আসা, যার প্রায় ৭৫% ই মোবাইল ফোন থেকে। দক্ষিণ এশীয় দেশগুলোর ভেতর পঠন ও সম্পাদনা দুই দিক থেকেই ভারত এর সর্বোচ্চ অবস্থানে রয়েছে। একইসাথে পাতা পরিদর্শনের পরিসংখ্যানের দিক থেকে ভারত প্রথম ৫ এ, ইংরেজি উইকিপিডিয়ায় সক্রিয় সম্পাদকের সংখ্যার দিক থেকে প্রথম ৩ এ রয়েছে। ভারতের প্রথম ৫ টি সর্বাধিক পঠিত উইকিপিডিয়ার ভাষাভিত্তিক সংস্করণ হলো ইংরেজি, হিন্দি, বাংলা, কন্নড় এবং তামিল উইকিপিডিয়া।
একটি চ্যাপ্টার, উইকিমিডিয়া বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ায় মোট ১৮ টি অ্যাফিলিয়েট রয়েছে। সাঁওতালি ও কারাভালির মতো ব্যবহারকারী দলগুলো শুধু ভাষা, সংস্কৃতি ও সাহিত্য নিয়েই কাজ করেনা, বরং ভারতীয় উপমহাদেশীয় ভাষা রয়েছে, এমন দেশসমূহের সাথে আন্তর্জাতিক সহযোগিতামূলক উদ্যোগেও সক্রিয় অঙ্গগ্রহণ করে থাকে। দক্ষিণ এশিয়াতে এমন অনেক ক্ষুদ্র সম্প্রদায় রয়েছে, যেগুলো উইকিমিডিয়া প্রকল্পসমূহে অবদান রাখার জন্য ভারসাম্যপূর্ণ সম্প্রদায় তৈরির এবং নিজেদের লক্ষ্য খুঁজে নেবার উদ্দেশ্যে আউটরিচ ও যৌথ উদ্যোগের আয়োজন করছে। ব্যঘ্র প্রকল্পের মতো উইকি লাভস ক্যাম্পেইন ও স্থানীয় ক্যাম্পেইনগুলোর ধারাবাহিকতায় উইকিমিডিয়া প্রকল্পসমূহ বিকশিত হচ্ছে এবং বিষয়বস্তুর সমতার দিক থেকেও উন্নতি দেখতে পাওয়া যাচ্ছে।
বৈশ্বিক আন্দোলনে দক্ষিণ এশিয়া অন্যতম অবদানকারী এবং তাঁদের কাজ বর্ষসেরা উইকিমিডিয়ানের মতো বিভিন্ন পর্যায়ে স্বীকৃত হয়েছে, যেখানে ২০২১ সালে এই অঞ্চলের অবদানকারীরা বিশেষ স্বীকৃতি, বর্ষসেরা কারিগরি অবদানকারী এবং রিচ মিডিয়া অ্যাওয়ার্ড অর্জন করেছেন। কমিউনিটি ইনসাইটস জরিপ ২০২১ অনুযায়ী দক্ষিণ এশিয়ায় অধিকতর আয়োজক অবস্থান করছেন এবং অঞ্চল কমিউনিটি বিলঙ্গিং অ্যান্ড এঙ্গেজমেন্ট মাপকাঠিতে অন্যান্য অঞ্চলের তুলনায় বেশ ভালো স্কোর প্রদর্শন করেছে।
গ্রান্ট ও অর্থায়নের দিক বিবেচনায়, ভারত ও বাংলাদেশের চ্যালেঞ্জিং আইনি কাঠামোর ভেতরেও গত অর্থবছরে দক্ষিণ এশিয়ার দলগুলো উইকিমিডিয়া ফাউন্ডেশন থেকে ২২১,০০০ মার্কিন ডলারের অর্থায়ন পেয়েছে। দক্ষিণ এশীয় আঞ্চলিক গ্রান্টস কমিটির সিদ্ধান্তে র্যাপিড ফান্ড ও জেনারেল সাপোর্ট ফান্ডের আওতায় এই অর্থায়ন করা হয়। সক্রিয় সম্প্রদায়ের সংখ্যা ও আকারের কারণে অধিকাংশ অর্থায়নই ভারতীয় উইকিমিডিয়ানদের কাছে এসেছিল।
কারিগরি অবদান
দক্ষিণ এশীয় সম্প্রদায়গুলো কারিগরি দিকেও সক্রিয়ভাবে অবদান রেখে চলেছেন। এসব অবদানের ফলস্বরূপ নতুন সরঞ্জাম, সম্প্রদায়ের নতুন সদস্য এবং দীর্ঘমেয়াদী কারিগরি সমস্যার সমাধান পাওয়া গেছে। যেসব ক্ষেত্রে এসব সহযোগিতা দেখা গেছে, তার কয়েকটি:
- গুজরাতি উইকিসংকলন সম্প্রদায় মুক্ত লাইসেন্সের আওতায় ডিজিটাল বিষয়বস্তুর সহজপ্রাপ্তি নিশ্চিত করতে চমৎকার কাজ করে যাচ্ছে।
- লিঙ্গুয়া লিব্রে প্রকল্প ভারতীয় সম্প্রদায়সমূহের কল্পনাকে নথিবদ্ধ করতে কাজ করছে। লিঙ্গুয়া লিব্রে উইকিমিডিয়া ফ্রান্সের একটি সরঞ্জাম/প্রকল্প, যা অডিও আর্কাইভ তৈরি করে এবং একজন অবদানকারীকে তাঁর ভাষার শব্দ রেকর্ড ও তা কমন্সে আপলোড করতে সহায়তা করে। মারাঠি, বাংলা ও তামিল ভাষার মতো ভারতীয় উপমহাদেশের ভাষাগুলোতে এই সরঞ্জাম ব্যবহার করে শব্দ, অর্থ ও উচ্চারণের বিরাট সংগ্রহ তৈরি করা সম্ভব হয়েছে।
- ইন্ডিয়া মিডিয়াউইকি ডেভেলাপার্স ব্যবহারকারী দল বিভিন্ন সরঞ্জাম ও বট তৈরি ও রক্ষণাবেক্ষণের পাশাপাশি হ্যাকাথনের মতো আয়োজনও করে চলেছে।
- কমিউনিটি ইনসাইটস জরিপ ২০২১ অনুযায়ী কারিগরি ক্ষেত্রে ফাউন্ডেশনের অবদানের প্রতি অবদানকারীদের সন্তুষ্টি দক্ষিণ এশিয়ায় সরবোচ্চ (৮৪%) ছিল। সফটওয়ার তৈরি ফাউন্ডেশনের যৌথ সহায়তার প্রতি সন্তুষ্টিও দক্ষিণ এশিয়ায় বেশি ছিল (৮১%)।
দক্ষিণ এশীয় অঞ্চলে পার্টনারশিপ
পার্টনারশিপ বা যৌথ আয়োজনের দিক থেকে এই অঞ্চলে সৃজনশীল ও স্বেচ্ছাসেবী নেতৃত্বাধীন বেশ কিছু কাজ দেখা গেছে। সুইসাইড প্রিভেনশন ইন্ডিয়া ফাউন্ডেশনের সাথে আর্টফরগুড এর অধীনে সহযোগিতাভিত্তিক মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক কাজ এর ভেতর অন্যতম। ইন্টারন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অব ইনফরমেশন অ্যান্ড টেকনোলজি হায়দ্রাবাদের (একটি বিখ্যাত ভারতীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান) সাথে উইকিমিডিয়া স্বেচ্ছাসেবকদের যৌথ প্রকল্প, যাতে আন্দোলনে অবদানকারী ও প্রতিনিধি হিসেবে আরো তরুণদের যোগ দিতে উৎসাহিত করবার জন্য তারুণ্য-ভিত্তিক ‘উইকিক্লাব‘ তৈরি করা হচ্ছে।
উইকিমিডিয়া ফাউন্ডেশন ও পেপারক্লিপের ভেতর আরো একটি অসাধারণ নতুন পার্টনারশিপ এই অঞ্চলে হতে যাচ্ছে, যা ভারতীয় উপমহাদেশের ভেতরের গল্প সংগ্রহ ও প্রকাশ করে থাকে। উইকিপিডিয়া ও উইকিমিডিয়া কমন্সের মতো জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত কনটেন্টের মাধ্যমে সংকলনকৃত ফুটবল ও অন্যান্য নথিভুক্ত ইতিহাস এই গল্পসমূহের ভেতর অন্তর্ভুক্ত। এ গল্পগুলো পেপারক্লিপের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হচ্ছে। এই সহযোগিতা থেকে প্রাপ্ত জ্ঞান উদীয়মান ডিজিটাল সম্প্রদায়গুলো কীভাবে ডিজিটাল কনটেন্ট গ্রহণ করে থাকেন, তা বুঝে সেই উপায়েই তাঁদের সাথে একাত্ম হতে আমাদের সাহায্য করবে।
ভবিষ্যত কর্মপন্থা
দক্ষিণ এশিয়ায় শক্তিশালী সহযোগিতার অন্যতম বড় বাধা হলো শারীরিক উপস্থিতিভিত্তিক সম্মেলন ও অন্যান্য সভার অনুপস্থিতি। কোভিড-১৯ বৈশ্বিক মহামারীর ফলে, বিশেষত ভাইরাসটির দ্বিতীয় ও তৃতীয় ঢেউয়ের সময় ভারতীয় উপমহাদেশের ও অন্যান্য দক্ষিণ এশীয় উইকিমিডিয়ানদের তাঁদের কাজের পরিধি কমিয়ে ফেলতে হয়েছে। তবে ২০২৩ সালের দিকে এগিয়ে যাবার পথে সম্প্রদায়কে আবারও একত্রিত হতে আগ্রহী হতে দেখা যাচ্ছে। ছয় বছর পর প্রথমবারের মতো আগামী বছর উইকিকনফারেন্স ইন্ডিয়াতে দক্ষিণ এশীয় আঞ্চলিক সম্প্রদায় সরাসরি একত্রিত হতে যাচ্ছে, যেটি আন্দোলনের বৈচিত্র্যময় সদস্যরা আয়োজন করছে এবং যার লক্ষ্য হলো বন্ধন, সম্পর্ক ও সহযোগিতা শক্তিশালী করা, যেটি একসময় এ অঞ্চলে দেখা যেত।
Can you help us translate this article?
In order for this article to reach as many people as possible we would like your help. Can you translate this article to get the message out?
Start translation