২১শে ফেব্রুয়ারি, বিশ্বজুড়ে ৩০০ মিলিয়ন+ বাংলা ভাষাভাষী জনগোষ্ঠীর জন্য একটি অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ একটি দিন। ১৯৫২ সালের এই দিনে ভাষার বাংলাকে পূর্ব পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা করার আন্দোলনে পুলিশ গুলি চালালে বেশ কয়েকজন তরুন শহীদ হয়। ১৭ নভেম্বর ১৯৯৯ সালে জাতিসংঘ কর্তৃক গৃহীত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী প্রতিবছর একুশে ফেব্রুয়ারি বিশ্বব্যাপী আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালন করা হয়।
মাতৃভাষার দিক দিয়ে বাংলা বিশ্বের পঞ্চম বৃহত্তম ভাষা হলেও সক্রিয় ব্যবহারকারীর দিক দিয়ে এই ভাষার উইকিপিডিয়া তুলনামূলকভাবে পিছিয়ে আছে। এর একটি কারণ হচ্ছে বাংলাদেশ ও ভারতের আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপট। আমরা এই ব্লগে কারণ বিশ্লেষণের দিকে যাচ্ছি না। নিবন্ধ সংখ্যার দিক দিয়ে বাংলা উইকিপিডিয়া কিছুটা পিছিয়ে, অবস্থান ৬৩ তম। যদিও নিবন্ধ সংখ্যা একটি উইকিমিডিয়া প্রকল্পের মান যাচাইয়ের কোনো বাটখারা নয়। কারণ, অনেক উইকিপিডিয়াই বট দিয়ে নিবন্ধ তৈরি করে থাকে, যেটা আমরা বাংলা উইকিপিডিয়ায় করি না। তারপরও ভাষাভাষী জনসংখ্যার সাথে তুলনা করলে এই সংখ্যাটা আরও বেশি হওয়া উচিত।
বাংলা উইকিপিডিয়া সম্প্রদায় অবশ্য নিবন্ধের সংখ্যা বৃদ্ধিতে খুব একটা মনোযোগও দিচ্ছে না। ২০২০ সালের ২৫ ডিসেম্বর বাংলা উইকিপিডিয়া এক লক্ষ নিবন্ধের মাইলফলক অর্জন করে। এর পর থেকেই আমরা বরং নিবন্ধের মানোন্নয়নে বেশি নজর দিচ্ছি। আর এজন্য সম্প্রদায়ের নেওয়া উদ্যোগের মধ্যে রয়েছে অনলাইন-অফলাইন ইভেন্ট, উইকি-আড্ডা ইত্যাদিতে সচেতনতা বৃদ্ধি কার্যক্রম, এডিটাথনে নতুন নিবন্ধ তৈরি না করে পূর্বের ছোট আকারের নিবন্ধ সম্পূর্ণকরণ, ১-২ লাইনের নিবন্ধ মূল নামস্থানে গ্রহণ না করা ইত্যাদি। এখানে একটি মজাদার তথ্য দেই। নিবন্ধের গভীরতার দিক দিয়ে বাংলা উইকিপিডিয়ার অবস্থান ষষ্ঠ। এটি প্রমাণ করে যে, নিবন্ধের মান বৃদ্ধির জন্য আমাদের নানা উদ্যোগ কিছুটা হলেও সফল হয়েছে।
ভাষার মাসকে সামনে রেখে উইকিমিডিয়া বাংলাদেশ প্রতিবছর অমর একুশে নিবন্ধ প্রতিযোগিতা নামে একটি নিবন্ধ লেখার প্রতিযোগিতা আয়োজন করে থাকে। প্রতিযোগিতার প্রতিপাদ্য হচ্ছে, “আসুন আমার ভাষায় তুলে ধরি, আমার ভালোবাসার সবকিছু”। এর একটি বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, প্রতিযোগিতায় তৈরি নিবন্ধগুলো বেশ বড় হয়ে থাকে। আগে এই প্রতিযোগিতায় নতুন নিবন্ধ তৈরি হলেও ২০২১ সাল থেকে বিদ্যমান নিবন্ধের মানোন্নয়ন করা হয়। বাংলা উইকিপিডিয়ায় সক্রিয় ব্যবহারকারী তুলনামূলক কম হওয়ায়, কেউ একটি নিবন্ধ শুরু করে অসম্পূর্ণ ফেলে রাখলে পরে আর সেটির মানোন্নয়ন হয় না বা কেউ সম্পূর্ণ করতে আগ্রহী হন না। তবে এই প্রতিযোগিতা শুরুর পর থেকে এই সমস্যাটির সমাধান হওয়া শুরু হয়েছে। এই প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণকারীরা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কিন্তু ছোট কিংবা মানহীন নিবন্ধের মানোন্নয়ন করে থাকে।
এই প্রতিযোগিতার আরেকটি বড় লাভ হচ্ছে, এর মাধ্যমে আমরা প্রতিবছর বেশ কিছু নতুন সক্রিয় ব্যবহারকারী পাই। আমি আমার কথাই বলি, আমি ২০১৭ সালে উইকিপিডিয়ায় অ্যাকাউন্ট খুললেও ২০১৮ সালের এই প্রতিযোগিতা থেকেই উইকিপিডিয়ার সম্পাদনা প্রক্রিয়ার সাথে পরিচিত হই। প্রতিবছর প্রতিযোগিতা শুরুর হওয়ার পর থেকে যথাসম্ভব সকল মাধ্যম, যেমন- ফেসবুক পেইজ ও গ্রুপ, বিভিন্ন মেইলিং লিস্ট, টেলিগ্রাম, গ্লোবাল সাইটনোটিশ, অন-উইকি বার্তা ইত্যাদির মাধ্যমে প্রচার করা হয়। যার কারণে প্রচুর নতুন ব্যবহারকারী আসে, যারা কিনা কখনো উইকিপিডিয়ায় সম্পাদনা করেন নি। এই প্রতিযোগিতার মাধ্যমে আমরা এমন অনেক ব্যবহারকারীও আসে যারা কিনা জানতোই না যে, উইকিপিডিয়ায় যে কেউই এডিট করতে পারে! একারণে প্রতিবছর ফেব্রুয়ারি আসলেই নতুনদের শেখানো পুরনোদের অন্যতম দায়িত্ব হয়ে দাঁড়ায়। প্রতিযোগিতা চলাকালীন সময়ে প্রতি শুক্রবার সন্ধ্যায় প্রতিযোগীদের নিয়ে একটি অনলাইন আড্ডার আয়োজন করা হয়, যেখানে নতুনদের নানা প্রশ্নের উত্তর প্রদান ও প্রয়োজন সাপেক্ষে স্ক্রিন শেয়ার করা তাদেরকে সম্পাদনা শেখানো হয়।
এবছরও ১লা ফেব্রুয়ারিতে শুরু হয়েছে অমর একুশে নিবন্ধ প্রতিযোগিতা ২০২৩। এই পোস্ট লেখা পর্যন্ত ৪০০ এর মতো ব্যবহারকারী প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণে আগ্রহ দেখিয়েছে। প্রতিযোগিতাটি চলবে ৩১ মার্চ পর্যন্ত। আয়োজক, পর্যালোচক, অংশগ্রহণকারী –সকলের প্রচেষ্টায় এটি সফল হবে বলে আশা রাখি। প্রতিযোগিতার লিংক- https://bn.wikipedia.org/s/pfsr
Can you help us translate this article?
In order for this article to reach as many people as possible we would like your help. Can you translate this article to get the message out?
Start translation